হিমায়ক যন্ত্রের প্রকারভেদ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

মাছ বা চিংড়ির হিমায়িতকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের হিমায়ক যন্ত্র বা ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিয়ে কয়েকটি হিমায়ক যন্ত্রের বর্ণনা দেয়া হলো-

ক) এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারঃ এ ধরণের ফ্রিজারের ভিতর দিয়ে ঠান্ডা বাতাসের বাষ্প প্রবাহিত করে মাছ বা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যকে হিমায়িত করা হয়। এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-

(১) অনবরত ফ্রিজারঃ এ প্রকার ফ্রিজারে হিমায়িতকরণের সময় দ্রব্য বা Product ঘুরতে থাকে। হিমায়কের ভিতর এক পাশ থেকে মাছ বা দ্রব্যাদি ঢুকানো হয় এবং অন্য পাশ দিয়ে হিমায়িত উপাদান বের করা হয়।

(২) ব্যাচ ফ্রিজারঃ ব্যাচ ফ্রিজারে মাছ বা চিংড়ি বা দ্রব্য প্রবেশ করানো হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে হিমায়িত করা হয়।
বিভিন্ন প্রকার ফ্রিজারের মধ্যে এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। কারণ এর ব্যবহারে সুবিধাগুলো হচ্ছে- এ জাতীয় ফ্রিজার বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা হয়, এ জাতীয় ফ্রিজারে হিমায়িতকরণে কম খরচ করা হয় এবং হিমায়তকরণের সময় কম পরিচর্যা করলেই চলে।

খ) কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজারঃ এ ধরনের হিমায়ক যন্ত্রে চিংড়িকে সরাসরি হিমায়িত প্লেটের ওপর রেখে হিমায়িত করা হয়। কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার চার প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- প্লেট ফ্রিজার, ব্যান্ড ফ্রিজার, রোটারি ফ্রিজার এবং ড্রাম ফ্রিজার। এগুলোর মধ্যে প্লেট ফ্রিজার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ফ্রিজারে চিংড়িকে ফাঁপা ধাতুর প্লেটের মধ্যে রাখা হয় যার মধ্যে শীতলীকরণের জন্য রেফ্রিজারেন্ট প্রবাহিত করা হয়। 

বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার তাপ নিরোধক পৃথক রুমে ( Insulated room) স্থাপিত থাকে যেখানে মাছকে প্যাকেট বা ব্লক সংযুক্ত আকারে হিমায়িত করা হয়। প্রতিটি মাছ বা চিংড়ির ব্লক ৫০-৬০ মিলিমিটার পুরু হয়। ব্লক তৈরির জন্য প্লেটগুলোতে সংযুক্ত পাম্পের সাহায্যে ঠান্ডা লবণ পানি (Cold brine), অ্যামোনিয়া বা রেফ্রিজারেন্ট ১২ বা ২২ প্রবাহিত করা হয়। ফলে মেটাল প্লেটের তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রি সে. হয়ে থাকে। মৎস্যজাত দ্রব্য দ্রুত হিমায়িতকরণের জন্য কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়। সাধারণত চিংড়ি ও অন্যান্য ছোট ছোট মাছ ব্লক আকারে এই প্রকার ফ্রিজে হিমায়িত করা হয়।

গ) ইমারসন ফ্রিজার: এ ক্ষেত্রে মাছকে নিম্ন তাপমাত্রায় তরল পদার্থে ডুবানো বা নিমজ্জিত করা হয়। এভাবে সরাসরি ঠান্ডা তরলের মধ্যে রেখে মাছের দেহের তাপমাত্রা কমানোর পদ্ধতি এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারে ঠান্ডা বাতাস প্রয়োগ থেকে উৎকৃষ্ট। পানির ফ্রিজিং পয়েন্টের চেয়ে এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত তরল পদার্থের ফ্রিজিং পয়েন্ট অনেক বেশি হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ইমারসন ফ্রিজারের কোনো আদর্শ নকশা নেই এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যবহারের জন্য বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। সাধারণত ঠান্ডা লবণ পানি অথবা কোন রেফ্রিজারেন্ট বাম্পকে পাম্প এর সাহায্যে ক্রমাগত মৎস্যজাত দ্রব্যের ওপর প্রবাহিত করা হয় অথবা মৎস্যজাত দ্রব্যকে একমুখী ঠান্ডা দ্রবণের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। মাছ ধরার ট্রলারে চিংড়ি হিমায়িতকরণে ইদানিংকালে লবণ পানির দ্রবণের সাথে ২০% গ্লুকোজ এবং ২০% খাবার লবণ যোগ করে সাফল্যজনকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইমারসন ফ্রিজারে মাছ ধরার ট্রলারে প্যাকেটকৃত নয় (Unpacked) এমন মাছের হিমায়িতকরণের জন্য উপযুক্ত।

ঘ) শার্প ফ্রিজার: শার্প ফ্রিজার একটি পৃথক ইনসুলেটেড বা তাপ নিরোধক ঘর যার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সে. রাখা হয়। এ ফ্রিজারে বিভিন্ন আকারের কয়েল দ্বারা তৈরি সেলফ থাকে যার ভিতর দিয়ে ঠান্ডা লবণ পানি, অ্যামোনিয়া বা অন্যান্য রেফ্রিজারেন্ট প্রবাহিত করা হয়। হিমায়িতকরণের সময় মাছ বা চিংড়িকে সরাসরি সেলফে বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি প্যানের ওপর রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে তাপমাত্রার পরিবর্তন খুব ধীর গতিতে হয়। কারণ মৎস্যদ্রব্যের সম্পূর্ণ উপরিভাগ (surface) ফ্রিজারের পাইপের সংস্পর্শে থাকতে পারে না। এবং ফ্রিজারের ভিতর বায়ু চলাচল সীমিত। এ প্রকার হিমায়ন পদ্ধতি ধীরগতি সম্পন্ন ও পুরাতন বিধায় এর ব্যবহার বর্তমানে অত্যন্ত সীমিত। 

Content added || updated By
Promotion